সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৫ অপরাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধি॥ঝালকাঠিতে এক নারীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় ও নির্যাতনের পরে চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শারমিন মৌসুমি কেকা ও শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান তাপুসহ ৬ জনের নামে আদালতে মামলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝালকাঠির নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ নির্যাতিত নারী পারভীন আক্তার (৩০) বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. শহিদুল্লাহ সদর থানার ওসিকে অভিযোগ এফআইআর হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ এবং পাশাপশি বাদীর সম্পূর্ণ নিরাপত্তা প্রদানের আদেশ দেন। মামলার অপর আসামিরা হলেন, আনিসুর রহমান তাপুর বড় বোন সেলিনা আক্তার লাকি, ছোট বোন আইরীন পারভীন এ্যানি, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী রাখি আক্তার এবং ফাতেমা শরীফ।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, গত ১০ জুলাই বোরহান উদ্দিনের সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়েতে আবদ্ধ হই আমি। এর আগে বিএনপি নেতা আনিসুর রহমানের বোন সেলিনা আক্তার লাকিকে বিয়ে করেন বোরহান উদ্দিন। দ্বিতীয় বিয়ে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতা আনিসুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেত্রী শারমীন মৌসুমী কেকা, সেলিনা আক্তার লাকি, রাখি আক্তার, ফাতেমা শরীফ, আইরিন পারভীন এ্যানিসহ ৮-১০ জন ৩০ আগস্ট রাত ৮টার দিকে জেলা পরিষদ ভবনের সামনের ভাড়া বাসায় আমাকে জিম্মি করেন।
বোরহান উদ্দিনের সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়েতে আবদ্ধ হওয়ায় প্রথম স্ত্রী সেলিনা আক্তার লাকি, তার ভাই আনিসুর রহমান ও আওয়ামী লীগ নেত্রী কেকার নির্দেশে আমাকে মারধর করেন তাদের সহযোগীরা। মারধরের ফাঁকে বাসা থেকে দুই লাখ টাকা ও দুই লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার লুটে নেন তারা। পরে বাসা থেকে তুলে নিয়ে পূর্বচাঁদকাঠি হোটেল হিলটনের নিচতলার একটি কক্ষে আমাকে আটকে রাখেন। সেখানেও আমাকে ব্যাপক মারধর করেন আসামিরা।
ওই দিন রাতে হোটেল হিলটনের নিচতলায় কাঁচি দিয়ে আমার মাথার চুল কেটে উল্লাস করেন তারা। এরপর পরনের কাপড় খুলে শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে চুন লাগিয়ে দেন। এ অবস্থার কথা জানিয়ে আমার ভাইকে ফোন করে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন আনিসুর রহমান।
৩১ আগস্ট দুপুর ১২টার মধ্যে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ না দিলে আমাকে হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। একই সঙ্গে আমাকে যৌন হয়রানি করেন আনিসুর। যৌন হয়রানি থেকে বাঁচতে আমাকে বিভিন্ন কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলা হয়। স্বাক্ষর দিতে না চাইলে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করা হয়। অবশেষে জীবন বাঁচাতে বিভিন্ন কাগজে স্বাক্ষর দেই আমি। ৩০ আগস্ট রাত ৮টা থেকে ৩১ আগস্ট দুপুর ২টা পর্যন্ত একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রেখে আমাকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। আমার অবস্থা দেখে নির্বাক হয়ে যান আমার ভাই নুরুজ্জামান। পরে দুই লাখ টাকা দিয়ে আমার জীবন ভিক্ষা চান ভাই।
নির্যাতিত নারীর চুল কাটার ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন আসামিরা
এরপর রুমের তালা খুলে দিয়ে আমার ভাইকে আনিসুর বলেন, ‘আজ তোর বোনের জীবন ভিক্ষা দিলাম, যা নিয়ে যা। ভবিষ্যতে যদি বোরহানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করো তাহলে বোরহান এবং তোর বোনকে শেষ করে ফেলব। এখান থেকে তোর বোনকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে যাবি। হাসপাতাল কিংবা ডাক্তারের কাছে যাবি না। কাউকে কিছু বলবি না। থানায় যাবি না। কাউকে কিছু বললে বা মামলা করলে তোদের গ্রামে গিয়ে বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেব।’
মামলার বাদী এজাহারে আরও উল্লেখ করেন, তাদের হাত থেকে জীবন বাঁচিয়ে গুরুতর অবস্থায় একটি ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে খেয়েছি। হাসপাতালে যেতে পারিনি তাদের ভয়ে। কিছুটা সুস্থ হয়ে ৯ সেপ্টেম্বর থানায় গেলে মামলা না নিয়ে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেয়।
নির্যাতিত নারী বলেন, আওয়ামী লীগ নেত্রী কেকা, তার সহযোগী এবং বিএনপি নেতা আনিসুর ও তার বোন লাকি আমার ওপর যে নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
বাদীর আইনজীবী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, নির্যাতিত নারী আদালতে মামলা করেছেন। মামলাটি নথিভুক্ত করে বাদীকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য সদর থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খলিলুর রহমান বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত আদালতের আদেশ পাইনি। আদালতের আদেশ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply